নারীর ক্ষমতায়ন

ভাস্বতী মজুমদার “যে রাঁধে সে চুল ও বাঁধে! – শুধুই প্রবাদ নাকি সত্যি? কী মনে করে আপামর জনতা? প্রাচীন যুগ থেকে চলে আসা এক অলিখিত নিয়ম- মেয়েদের জন্ম শুধুমাত্র বিয়ে আর সংসারের জন্য! সত্যিই কী তাই? তাহলে বৈদিক যুগের অপালা, গার্গী-দের নাম আজও আমরা ইতিহাসের পাতায় পড়ি কেন? কেন তারা ব্যাতিক্রমী? সমাজ কিন্তু সেইসময় তাদের স্বীকৃতি দিয়েছিল বিদূষী নারী হিসেবে। তাহলে আজকের নারীরা কোথায়? খবরের কাগজে কেন আমাদের চোখ আটকায় পণের জন্য অত্যাচার, বধূ হত্যা, ডাইনি অপবাদে পিটিয়ে খুন-এর মতো ঘটনাগুলোতে? একবিংশ শতাব্দীর যুগে এক ক্লিকেই যখন গোটা দুনিয়া হাতের মুঠোয়, গ্রেটা থুনবার্গ মাত্র ১৫ বছর বয়সে যখন বিশ্বের তাবড় তাবড় নেতাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দিয়েছে পরিবেশ কর্মী হিসেবে, মালালা ইউসুফজাই যখন মাত্র ১৭ বছর বয়সে তালিবানি জঙ্গিদের গুলি খেয়েও পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য লড়াই করে যাচ্ছে, ঠিক তখনই এর বিপরীত দুনিয়ায় কন্যা ভ্রূণ হত্যা করা হয়, ১৫-১৬ বছর বয়সের বাচ্চা মেয়ের বিয়ে দেওয়া হয়, মাছের বড় পিসটা ভাইকে দেওয়া হয়, একবার ক্লাসে কম নম্বর পেলে পড়াশোনা ছাড়িয়ে ঘরের কাজ শেখানো হয় উপযুক্ত বিবাহযোগ্যা কন্যায় রূপান্তরিত করার জন্যে। তাহলে সমাজ নারীকে ঠিক কোন রূপে চায়? মানুষ যে নারীকে দূর্গা-কালী-সরস্বতী জ্ঞানে পূজা করে, বাস্তবে সেই নারীকেই অবহেলা করে। চলতি বাজারে ‘নারীর ক্ষমতায়ন’ এক বহুল বিক্রীত টপিক যার গূঢ় অর্থ অনেকেরই অজানা। শুধুমাত্র মেয়েদের চাকরী করাকেই অনেকে নারীর ক্ষমতায়ন ভেবে থাকেন। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে এর বিস্তৃতি ব্যাপক। স্থিতিশীল উন্নয়নের সাথে সরাসরি যুক্ত এই বিষয়। আজকে নারীর উন্নয়ন মানে কালকে সেই সমাজের উন্নয়ন। নারীর বাক্ স্বাধীনতা, মতামত প্রদানের স্বাধীনতা বা সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতাও কিন্তু পক্ষান্তরে নারীর ক্ষমতায়ন। নারী যখন দু’হাত মেলে উড়তে চায়,তার পিছু টেনে ধরে লিঙ্গ বৈষম্য। দাদা বা ভাইকে যখন ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ানো হয় বা লাখ টাকা অ্যাডমিশন ফি দিয়ে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করানো হয় ঠিক তখনই বোন বা দিদিকে সাধারণ কলেজে ভর্তি করানোটাই ফালতু মনে হয় কারণ ঐ টাকায় তৈরী হবে মেয়ের বিয়ের নেকলেস! হায় রে নারী!!! যে সময়ে নারী ট্রেন থেকে প্লেন চালাতে পারে, রাজ্য থেকে দেশ চালাতে পারে, বন্দুকের গুলিতে এফোঁড়-ওফোঁড় করতে পারে শত্রুর দেহ, মার্শালআর্ট শিখে জখম করতে পারে রাস্তার বখাটেদের, বিশ্বের উচ্চতম স্থান মাউন্ট এভারেস্ট জয় করতে পারে, স্পেস স্টেশনে রাতের পর রাত কাটাতে পারে, ক্রিকেট-ফুটবলের মতো তথাকথিত পুরুষ অধ্যুষিত খেলা দাপিয়ে খেলে বেড়াতে পারে, সে সময়ে গর্বিত পুরুষ শাসিত সমাজের ভাবা উচিৎ ভবিষ্যতের কথা কারণ দাঁড়িপাল্লার কোনো একদিক ভারী হলে যেমন পাল্লা ছিঁড়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে, তেমন ই নারী-পুরুষের মধ্যে নির্দিষ্ট কোনো এক লিঙ্গের পাল্লা ভারী হলে ভারসাম্য হারাবে সমাজ। এক সুন্দর সমাজের জন্যে প্রয়োজন লিঙ্গ ভারসাম্যের। নারীর ক্ষমতায়ন সমাজের সংজ্ঞা বদলে দেবে, শক্তি জোগাবে স্বপ্ন পূরণের মোড়ক উন্মোচন করার! 

Related Articles

Responses

Your email address will not be published. Required fields are marked *